মানবজাতির প্রধান প্রধান নরগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।

মানবজাতির প্রধান প্রধান নরগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।


ভূমিকা: নৃগোষ্ঠী বা মানবধারা হচ্ছে নৃবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয়। নৃগোষ্ঠীর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন মানবধায়ার বংশানুসারে গায়ের রং মাখার আকৃতি, চুলের রং ও ধরন, মুখাবয়ব, নাসিকার আকৃতি, দৈহিক উচ্চতা প্রভৃতি জীবনের বিভিন্ন প্রলক্ষণ শনাক্ত করা যায়। নৃগোষ্ঠীর মাধ্যমে বিভিন্ন মানবজাতির মানসিক,, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সভ্যতাকেন্দ্রিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়। বিভিন্ন Race সাধারণত বয়ে আনে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র ইতিহাস ধারা।
মানবজাতির প্রধান প্রধান নরগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর


মানবজাতির প্রধান প্রধান নরগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য:

মানবজাতির প্রধান প্রধান নরগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

(ক) ককেশীয় বা শ্বেতকায়:

১. এদের আবাসস্থল প্রধানত ইউরোপ, আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলব্যাপী।

২. ককেশীয়ানের অধিকাংশের গায়ের রং সাদা বা কালো লালচে। এদের মুখাকৃতি প্রধানত সরু বা লম্বাকৃতির হয়ে থাকে।

৩. ককেশীয়দের নাক প্রধানত উন্নক, চিকন, লম্বা ও সরু। ককেশীয়দের চোখের রং হালকা থেকে কালো-বাদামি। চোখের মণি নীল, ঠোঁট প্রধানত গাড়লা, কান লম্বায় ও প্রশস্তে মাঝারি ধরনের।

৪ ককেশীয়দের চুলের রং বাদামি বা সোনালি। মাথার চুল সরু ও মোটা উভয় ধরনের হয়ে থাকে। এদের মাথার চুল, মুখের দাঁড়ি ও গায়ের লোমের আধিক্য আছে।

৫. অধিকাংশ ককেশীয় দীর্ঘদেহী। তবে উচ্চতায় অনেকেই মধামা। এদের দেহ বলিষ্ঠ শক্তিশালী। এরা সুন্দর ও উন্নত স্বাস্থ্যের অধিকারী।

(খ) মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠী:

১ মধ্য উত্তর এবং পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইংন্দানেশিয়ার অধিকাংশ মানুষ এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ইডিয়ান জনগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠীর আওতাযুক্ত।

২. মঙ্গোলীয়দের গায়ের রং হলুদ বা বাদামি ধরনের। মঙ্গোলীয়দের মুখ ককেশীয়দের তুলনায় চওড়া ও কিছুটা সর্বাকৃতির। মুখটি চওড়া গোলাকৃতি এবং সমতল। মঙ্গোলীয়দের মাখার আকৃতি ককেশীয়দের তুলনায় প্রধানত চওড়া ও গোল।

৩. মঙ্গোলীয়দের নাক ককেশীয়দের নাকের তুলনায় কিছুটা ক্ষুদ্রাকৃতির মোটা এবং অনুন্নত। মঙ্গোলীয়দের চোখের রং কল্যে-বাদামি। তবে তা কালো বর্ণেরও হয়ে থাকে।

৪ এদের মাথায় চুল প্রধানত কালো হয়ে থাকে। এদের চুল দীর্ঘ, খাঁড়া ও মোটা। মুখ ও গায়ের লোমের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম।

৫. এদের দৈহিক গঠন মূলত বলিষ্ঠ পর্যায়ের। এদের উচ্চতা মধ্যম মাদের। অনেকের আনার খর্বাকৃতির।

(গ) নিগ্রো বা কৃষ্ণকায়:

১. নিগ্রোদের আবাসস্থল পশ্চিম আফ্রিকার সাহানা অঞ্চল। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে বিশেষ করে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে প্রধান আবাসভূমি।

২. নিগ্রো জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের মাথা লম্বাকৃতির। কিছু কিছু নিগ্রোর মাথা অবশ্য চওড়া। নিগ্রোদের মুখ লম্বাকৃতির হলেও ককেশীয়দের মতো অত মোটা বাত সরু নয়। নিগ্রোদের কপাল উল্লম্বী প্রকৃতির। 

৩. নিগ্রো জনগোষ্ঠীর চুল কালো বা কালো-বাদামি। তাদের চুল মোটা, ঘন ও পশমিতুল্য কোঁকড়ানো। নিগ্রোদের প গায়ের রং ঘোর কালো বর্ণের।

৪. নিগ্রোদের নাক চওড়া, মাংসল বেশ অনুন্নত। নিগ্রোদের নাক নিচু, মোটা, প্রশস্ত ও ভোঁতা। চোখের রং কালো-বাদামি থেকে কালো। নিগ্রোদের ঠোঁট মোটা, পুরু ও উলটানো প্রকৃতির। নিগ্রোদের কান তুলনামূলকভাবে ছোট এবং প্রশস্ত।

৫. নিগ্রোদের উচ্চতা নানা ধরনের হয়ে থাকে। লম্বাকৃতির, মধ্যমাকৃতির এবং খর্বাকৃতির নিগ্রো দেখতে পাওয়া যায়। তাদের দেহের গঠন শক্ত, সুঠাম ও বলিষ্ঠ।


(ঘ) অস্ট্রালয়েড:

অস্ট্রালয়েডদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো গায়ের রং কালো-বাদামি ও চকলেট রঙের। চুল ঢেউ খেলানো, মাথা লম্বাকৃতির, নাক প্রশস্ত ও মাংসল। ঠোঁট মোটা, চোখের গঠন স্বাভাবিক ও রং কালো। মুখাকৃতি লম্বা, উচ্চতা মাঝারি থেকে লম্বা, শরীরে লোমের প্রাচুর্য আছে। বিশেষ দুটি দৈহিক বৈশিষ্ট্য যা অস্ট্রালয়েডদেরকে অন্যদের থেকে বিশেষভাবে পৃথক করেছে। যথা-

১. তাদের কপাল নিচু।

২. চোখের ভ্রূ ও হাড়দ্বয় উঁচু এবং জাতে লোমের প্রাচুর্য।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ মূলত একটি প্রজাতি। এ প্রজাতিকে Homosapiance বলা হয়। মানব প্রজাতি অভিন্ন হলেও বিভিন্ন দৈহিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে এরা কিন্তু অভিন্ন নয়। অর্থাৎ, দৈহিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এদের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ভিন্নতার বিষয়টি অতি স্বচ্ছ এবং সহজেই অনুমেয়।

No comments:

Post a Comment